ছাদে সফেদা চাষ ও পরিচর্যা

 ছাদে সফেদা চাষ ও পরিচর্যা 

ছাদে সফেদা চাষ,গাছে বেশি সার কিংবা বেশি পুষ্টি সরবরাহ করলেই যে গাছ বেশি ফলন দিবে তা কিন্তু নয়। সার প্রয়োগ করতে হবে, গাছের বয়স অনুযায়ী সঠিক মাত্রায়
সফেদা


সফেদা দেখতে যেমন বেশ আকর্ষনীয় খেতেও তেমন সুস্বাদু, মিষ্টি ও পুষ্টিকর একটি ফল। সফেদায় রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম,আয়রন, বিটা ক্যারোটিন ও ক্যালরি।  আপনি চাইলে খুব সহজে ছাদে এই ফল চাষ করতে পারেন। 


▶️জাত নির্বাচনঃ

বারি সফেদা-১ঃ

এটি একটি উচ্চ ফলনশীল এবং নিয়মিত ফলদানকারী জাত। ফল দেখতে গোলাকার চ্যাপ্টা ও আকারেও বেশ বড় হয়। প্রতিটি ফলের ওজন প্রায় ৮০-৯০ গ্রাম এবং ৯০-৯৫% অংশই খাওয়ার উপযোগী। ফলে টিএসএসের পরিমান ১৪-১৬%।বীজ দেখতে কালচে তামাটে বর্ণের হয়।গাছ কম বেশি সারাবছরই ফল দেয়। 


বারি সফেদা-২ঃ

এটিও একটি উচ্চ ফলনশীল জাত। ফল দেখতে গোলাকার ও মাঝারি সাইজের হয়। প্রতিটি ফলের ওজন ৭০-৮০ গ্রাম,ফলের শাস পাকলে লালচে-বাদামী বর্ণ ধারণ করে। ফলের ৮১% অংশই ভক্ষণযোগ্য, খেতে সুস্বাদু ও মিষ্টি এবং বিক্সমানের পরিমাণ ১৮%। 


বারি সফেদা-৩ঃ

নিয়মিত ফলদানকারী ও উচ্চ ফলনশীল একটি জাত এটি। গাছ মাঝারি সাইজের, মধ্যম খাড়া ও অধিক শাখা প্রশাখা সমৃদ্ধ হয়। তবে ফল দেখতে গোলাকার, বেশ বড় এবং ধূসর রঙের হয়। ফলের শাসও ধূসর রঙের, নরম, সুগন্ধযুক্ত ও বেশ মিষ্টি হয়। প্রতিটি ফলের ওজন প্রায় ১১৭ গ্রাম ও ৯১% অংশই খাওয়া যায়। 


▶️চাষ পদ্ধতিঃ


√√টব নির্বাচন

সফেদা গাছ লাগানোর জন্য একটু বড় সাইজের টব কিংবা একটি ড্রামের ৩/৫ অংশ কেটে নিতে হবে। টবের মাটি ধারণ ক্ষমতা হতে হবে কমপক্ষে ৪০-৪৫ কেজি। 


√√মাটি নির্বাচনঃ

বেলে দোআঁশ কিংবা দোআঁশ মাটি সফেদা চাষের জন্যে বেশি উপযোগী। তবে মনে রাখতে হবে টব থেকে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা যেন ভালো হয়। 


√√জৈব উপায়ে মাটি তৈরিঃ(১টি টবের জন্য) 


৪০ ভাগ মাটির সাথে ৪০ ভাগ ভার্মিকম্পোস্ট বা গোবর সার,১০ ভাগ কোকোপিট,১০ ভাগ বালির মিশ্রণের সাথে ২০০ গ্রাম শিং কুচি/হাড় গুড়ো/ডিমের খোসা,১০ গ্রাম জৈব ছত্রাকনাশক পাউডার ভালো ভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এই মিশ্রণে সরাসরি গাছ বসানো যাবে।


রাসায়নিক সারের মিশ্রণে মাটি তৈরিঃ


ভাল বৃদ্ধির জন্য এবং গৌণ পুষ্টি মৌলের অভাবজনিত রোগ পরিহারের জন্য উপরের মিশ্রণের সাথে ৫০ গ্রাম টি এস পি সার,৫০ গ্রাম এম ও পি সার,১০ গ্রাম জিপসাম এবং ৫ গ্রাম বোরন সার মেশাতে হবে। এই মিশ্রণের সাথে মাটিতে থাকা কৃমি দমনের জন্য দানাদার কীটনাশক কার্বোফুরান ৫ জি/৩জি ১০ গ্রাম দিতে হবে৷উপরোক্ত মাটির মিশ্রণ ১০-১২ দিন ড্রামে ভরে রেখে দিতে হবে। 


√√গাছ লাগানো সময়ঃ


সফেদা গাছ লাগানো উপযুক্ত সময় হল জুন-জুলাই মাস।তবে আপনি চাইলে বর্ষার শেষ দিকেও এই গাছ লাগাতে পারেন৷ 


√√চারা রোপন পদ্ধতিঃ

নির্বাচিত ড্রামের তলায় কিছু ছোট ছোট ছিদ্র করে দিতে হবে যেন  পানি জমে না থাকে। অতপর কিছু ছোট ছোট ইটের টুকরো কিংবা পাথর দিয়ে তার উপর বালি ছিটিয়ে দিয়ে উপরোক্ত নিয়মে তৈরিকৃত মাটি দিয়ে দিতে হবে। তারপর গাছের চারা রোপনের পর চারপাশ ভালো করে চেপে দিয়ে একটি খুঁটি বেঁধে দিতে হবে। 


সার ব্যবস্থাপনাঃ


প্রথম কিস্তিঃ


প্রতি বছর মার্চ মাস

(মধ্য ফাল্গুন থেকে মধ্য চৈত্র)। 


২য় কিস্তিঃ


বর্ষার পূর্বে মে মাসে 

(মধ্য বৈশাখ থেকে মধ্য জৈষ্ঠ্যমাস) 


৩য় কিস্তিঃ

বর্ষার পরে সেপ্টেম্বর মাসে 

(মধ্য ভাদ্র থেকে মধ্য আশ্বিন)


সারের পরিমাণ(গাছ প্রতি)


গাছে বেশি সার কিংবা বেশি পুষ্টি সরবরাহ করলেই যে গাছ বেশি ফলন দিবে তা কিন্তু নয়। সার প্রয়োগ করতে হবে, গাছের বয়স অনুযায়ী এবং সঠিক মাত্রায়।


★★১-৩ বছর বয়সী গাছের জন্য সার:


গোবর - ১২-১৫ কেজি,

ইউরিয়া -১০০-১৫০ গ্রাম , 

টিএসপি- ৮০-১০০গ্রাম,

পটাশ- ৮০- ১০০গ্রাম।

জিপসাম -২০ গ্রাম 


★★৪-৭ বছর বয়সী গাছের জন্যঃ


গোবর - ১৫-২০ কেজি,

ইউরিয়া -২০০- ২৫০গ্রাম 

টিএসপি১২০-১৫০গ্রাম,

পটাশ-১২০-১৫০গ্রাম

জিপসাম -২৫ গ্রাম। 


★★৮-১০ বছর বয়সী গাছের জন্যঃ


গোবর-২০-২২ কেজি

ইউরিয়া ২৫০-৩০০ গ্রাম 

টিএসপি ১৫০-১৮০ গ্রাম

পটাস ১৫০-১৮০ গ্রাম 

জিপসাম ২৫-৩০ গ্রাম। 


★★১০ বছরের বেশি বয়সী গাছের জন্যঃ


গোবর ২৫-৩০কেজি

ইউরিয়া ৩০০-৩৫০গ্রাম

টিএসপি২০০-২৫০গ্রাম

পটাশ-২০০-২৫০গ্রাম।

জিপসাম ৩০ গ্রাম।


#এছাড়াও প্রতিদিনের চা পাতা কিংবা ডিমের খোসা চূর্ণ জমিয়ে কিছু দিন পর পর গাছের গোড়ায় দেওয়া যেতে পারে তাতে মাটিতে পুষ্টি সরবরাহ হবে এবং বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়া উপাদানের সঠিক ব্যাবহার হবে। 


পরিচর্যাঃ

★★১.চারা লাগানোর পর প্রথম ২-৩ মাস প্রর্যাপ্ত পানি দিতে হবে এবং আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। 


★★২.গাছ একটু বড় হলে ২০ দিন অন্তর অন্তর সরিষার খৈল পচা পানি দিতে হবে। সরিষার খৈল ১০ দিন পানিতে ভিজিয়ে রাখলেই সরিষার খৈল পচা পানি পাওয়া যায়। 


★★৩.বর্ষা আসার পূর্বে ৭ দিন অন্তর অন্তর কয়েকবার ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। 


★★৪. বছরে ৩-৪ বার গাছে ভালো কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে ফুল আসা অবস্থায় কোনো ভাবেই  কীটনাশক প্রয়োগ করা যাবে না। 


★★৫. গাছ লাগানোর ২ বছর পর থেকে প্রতি বছর বর্ষার শেষ হওয়ার সাথে সাথে টবের পরিধি থেকে ভিতরের দিকে ৩"পরিমান প্রস্থ এবং মাটির উপরের স্তর থেকে ৮"-১০" গভীরতা পরিমাণ মাটি তুলে ফেলতে হবে। অতপর জৈব সার মিশ্রিত নতুন মাটি যোগ করতে হবে।


★★৬.গাছ লাগানোর ২-৩ বছর পর্যন্ত গাছকে সুন্দর আকৃতি প্রদান করার জন্য নিয়মিত প্রুনিং ও ট্রেনিং করতে হবে। 


রোগবালাই ও পোকামাকড়ঃ


✴️কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা


কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণে সফেদা গাছের কাণ্ডে ছিদ্র হয়,কাণ্ডে মালার মতো ঝুল লেগে থাকে।এমন অবস্থায়, আপনি প্রাথমিকভাবে ছিদ্র বা গর্তের পোকা খুঁজে বের করে মেরে ফেলবেন। এরপর গর্তের ভেতর প্যারাডাইক্লোরোবেনজিন ঢেলে গর্তের মুখ মাটি দিয়ে বন্ধ করে দিবেন।এ পদ্ধতি ছাড়াও সিরিঞ্জ দিয়ে গরম পানি গর্তের ভেতর ইনজেক্ট করেও পোকা মারা যায়। 


✴️পাউডারি মিলডিউ: 


পাউডারি মিলডিউ রোগের আক্রমণে পাতায় সাদা পাউডারের আবরণ সৃষ্টি হয়। হাত দিয়ে ঘসলে পাউডার সরে যায়। তবে দীর্ঘদিন থাকলে পাতা পচতে শুরু করে।প্রাথমিক অবস্থায় গাছে পানি স্প্রে করতে হবে।সময়মতো প্রুনিং করে গাছ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আক্রমনের মাত্রা বেশি হলে সালফার বা ছত্রাকনাশক ওষুধ পানিতে মিশিয়ে এক সপ্তাহ পরপর দুবার স্প্রে করতে হবে।


ফলনঃ

বারি সফেদা -১ জাতের প্রতিটি গাছ বছরে ১১০-১২০ কেজি ও বারি সফেদা-২ জাতের গাছ ১০০-১১০ কেজি ফলন দেয়। তবে সবচেয়ে বেv


80শি ফলন দেয় বারি সফেদা-৩ জাতটি।এই জাতের প্রতিটি গাছ বছরে প্রায় ২০-২২৫ কেজি পর্যন্ত ফলন দেয়।

(ই-কৃষি ক্লিনিক)  

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url