সূর্যমুখী চাষ পদ্ধতির
সূর্যমুখী চাষ পদ্ধতির পরিচিতি
![]() |
| সূর্যমুখী চাষ |
ইংরেজী নামঃ Sunflower
বৈজ্ঞানিক নামঃ Helianthus annuus
পরিবারঃ Asteraceae (Compositae)
বৈজ্ঞানিক নামঃ Helianthus annuus
পরিবারঃ Asteraceae (Compositae)
সূর্যমুখী (Sunflower) মূলত তেল জাতীয় ফসল। সূর্যমুখীর বীজে শতকরা ৪০-৪৫ ভাগ উপকারী লিনোলিক এসিড রয়েছে এবং ক্ষতিকর কোনো ইরোসিক এসিড থাকে না। হৃদরোগীদের জন্য সূর্যমুখীর তেল খুবই উপকারী।১৯৭৫ সাল থেকে সূর্যমুখী একটি তেল ফসল হিসেবে বাংলাদেশে আবাদ হচ্ছে।সূর্যমুখীর হেক্টরপ্রতি ফলন ১.৭-১.৯ টন।
উপযুক্ত মাটিঃ
সূর্যমুখী সাধারণত সব মাটিতেই জন্মে। তবে দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে বেশী উপযোগী।
সূর্যমুখীর জাত
কিরণী (ডিএস-১)সূর্যমুখীর কিরণী (ডিএস-১ জাতটি সংগৃহীত জার্মপ্লাজম হতে বাছাইয়ের মাধ্যমে উদ্ভাবন কর হয় এবং ১৯৮২ সালে অনুমোদন করা হয়। এ জাতের গাছের উচ্ছতা ৯০-১১০ সেমি। বীজ লম্বা ও চেপ্টা। হাজার বীজের ওজন ৬০-৬৫ গ্রাম। বীজের রং কালো। প্রতি গাছে ১ টি করে মাঝরি আকারের পুস্পস্তক ধরে থাকে। ভাদ্র-আশ্বিন (মধ্য-আগষ্ট থেকে মধ্য-অক্টেবর) মাসে বপন করলে ফসল সংগ্রহ করতে ৯০-১০০ দিন সময় লাগে। প্রতি হেক্টরে ১.৩-১.৫ টন ফলন পাওয়া যায়। কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে (মধ্য-অক্টোবর থেকে মধ্য ডিসেম্বর) বপন করলে ১০০-১১০ দিন সময় লাগে। প্রতি হেক্টরে ১.৬-১.৮ টন ফলন পাওয়া যায়। বীজে তেলের পরিমাণ ৪২-৪৪%। জাতটি মোটামুটিভাবে অলটারনারিয়া ব্লাইট রোগ সহনশীল।
বারি সূর্যমুখী-২
এসটি-২২৫০ হাইব্রিড থেকে স্ব-পরাগায়ন ও নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এসটি-২২৫০ সি লাইনটি বাছাই করা হয়। এ লাইনটি ২০০৪ সালেরর মার্চ মাসে ‘বারি সূর্যমুখী ২’ নামে বাংলাদেশে চাষাবাদের জন্য অনুমোদিত হয়। এ জাতের গাছের উচ্চতা ১২৫-১৪০ সেমি। জাতের ব্যাস ২.০-২.৪ সেমি। পরিপক্ক পুস্পযুগবী বা মাথার ব্যাস ১৫-১৮ সেমি। বীজের রং কালো। প্রতি মাথায় বীজের সংখ্যা ৩৫০-৪৫০ টি। বীজে তেলের পরিমাণ শতকরা ৪২-৪৪ বাগ। ফসলের জীবনকাল রবি মৌসুমে ৯৫-১০০ দিন এবং খরিফ মৌসুমে ৮৫-৯০ দিন। হেক্টর প্রতি রবি মৌসুমে ২.০-২.৩০ টন এবং খরিফ মৌসুমে ১.৫-১.৮ টন।
জমি তৈরী
সূর্যমুখীর জমি গভীরভাবে চাষ হওয়া প্রয়োজন। জমি ৪-৫ বার আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে ঝুরঝুরে করে নিতে হয়।
বপনের সময়
সূর্যমুখী সারা বছর চাষ করা যায়। তবে অগ্রহায়ণ মাসে (মধ্য-নভেম্বর থেকে মধ্য ডিসেম্বর) চাষ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। দেশের উত্তর ও পশ্চিম অঞ্চলে তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রী সে. এর নিচে হরে ১০-১২ নি পরে বীজ বপন করা উচিৎ। খরিফ-১ মৌসুমে অর্থ্যৎ জ্যৈষ্ট (মধ্য-এপ্রিল থেকে মধ্য-মে) মাসেও এর চাষ করা যায়।
বপন পদ্ধতি ও বীজের হার
সূর্যমুখীর বীজ সারিতে বুনতে হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব ৫০ সেমি এবং সারিতে গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ২৫ সেমি রাখতে হবে। এ ভাবে বীজ বপন করলে হেক্টরপ্রতি ৮-১০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। বারি সূর্যমুখী-২ এর জন্য হেক্টরপ্রতি ১২-১৫ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।প্রতি শতকে ৩২-৪০ গ্রাম।
সার ব্যবস্থাপনাঃ
ভালো ফলনের জন্য সূর্যমুখীতে নিম্নরূপ সার ব্যবহার করতে হবে।
(সারের পরিমান শতক প্রতি)
| সারের নাম | সারের পরিমাণ |
|---|---|
| ইউরিয়া | ৭০০-৮০০ গ্রাম |
| টিএসপি | ৬০-৮০০ গ্রাম |
| এমওপি | ৪৫০-৬০০ গ্রাম |
| জিপসাম | ৪৮০-৭০০ গ্রাম |
| জিংক সালফেট | ৩০-৪০ গ্রাম |
| বোরিক এসিড | ৪০-৫০ গ্রাম |
| ম্যাগনেসিয়াম সালফেট | ৩৫০-৪০০ গ্রাম |
সার প্রয়োগ পদ্ধতি
ইউরিয়া সার অর্ধেক এবং বাকি সব সার শেষ চাষের সময় জমিতে ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া ২ ভাগ করে প্রথমে ভাগে চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর এবং দ্বিতীয় ভাগে ৪০-৪৫ দিন পর বা ফুল ফোটার পূর্বে প্রয়োগ করতে হয়
বীজ শোধন
মাটি ও বীজ থেকে সৃষ্টি বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের জন্য বীজ শোধন একান্ত প্রয়োজন। বীজ শোধনের ফলে প্রধানত বীজ বাহিত রোগ দমন হয়। প্রোভ্যাক্স/কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করা যায়। প্রতি কেজি সূর্যমুখী বীজের জন্য মাত্র ৩ (তিন) গ্রাম ছত্রাকনাশক প্রয়োজন।
এছাড়া ভিটাভেক্স-২০০ ছত্রাক নিবারক দ্বারা বীজ শোধন করা হয়। প্রতি কেজি সূর্যমুখী বীজের জন্য মাত্র ৩ (তিন) গ্রাম ভিটাভেক্স-২০০ প্রয়োজন। একটি বড় প্লাস্টিকের ঢাকনাযুক্ত পাত্রে সূর্যমুখীর বীজ নিয়ে পরিমাণমত ঔষধ মিশিয়ে পাত্রের মুখ বন্ধ করে ভালভাবে ঝাঁকিয়ে ১ দিন রেখে দেবার পর বীজ জমিতে বপন করতে হয়।
পাতলাকরণঃ
গাছ পাতলা করণ অতিরিক্ত গাছ থাকলে চারা গজানোর ১৫-২০ দিন পর প্রতি হিলি/গোছায় ১টি করে সুস্থ-সবল গাছ রেখে বকি গাছগুলো ফেলতে হবে।
সেচ ব্যবস্থাপনাঃ
সূর্যমুখী ফসলের ফলন বেশী পেতে হলে কয়েকবার সেচ দেয়া প্রয়োজন। প্রথম সেচ বীজ বপনের ৩০ দিন পর (গাছে ফুল আসার আগে), দ্বিতীয় সেচ বীজ বপনের ৫০ দিন পর (পুষ্পস্তবক তৈরির সময়) এবং তৃতীয় সেচ বীজ বপনের ৭০ দিন পর (বীজ পুষ্ট হবার আগে) সেচ দেয়া দরকার।
আগাছা দমন
চার গজানোর ২০-২৫ দিন পর প্রথম এবং চারা গজানোর ৪৫-৫০ দিন পরম দ্বিতীয় বার নিড়ানী দিতে হয়। সেচ প্রয়োগ সূর্যমুখী ফসলের বেশী পেতে হলে কয়েক বার পানি সেচ দিতে হবে। প্রথম সেচ বীজ বপনের ৩০ দিন পর (গাছে ফুল আসার আগে), দ্বিতীয় সেচ বীজ বপনের ৫০ দিন পর (পুষ্পস্তক তৈরির সময়) এবং সেচ বীজ বপনের ৭০ দিন পরে (বীজ পুষ্ট হবার আগে) দিতে হবে
ফসল সংগ্রহ
বপন থেকে পরিপক্ক হওয়া পর্যন্ত ৯০ থেকে ১১০ দিন সময় লাগে।
বীজ সংরক্ষণঃ
সূর্যমুখীর বীজ পরের মৌসুমে লাগানোর জন্য বীজ সংরক্ষণ করতে হয়। বীজ সংরক্ষণের আগে অপরিপক্ক ও ভাঙ্গা বীজ বেছে ফেলতে হবে। মোটা পলিথিন ব্যাগে বা কেরোসিন টিন বা টিনের ড্রামে বীজ সংরক্ষণ করা ভালো। ভেতরে পলিথিন দিয়ে চটের বস্তায় ভালোভাবে শুকানো বীজ প্রতি ৩০ কেজির জন্য ২৫০ গ্রাম ক্যালসিয়াম ক্লোরাইডসহ সংরক্ষণ করলে ৭-৮ মাস পরেও বীজের শতকরা ৮০ ভাগ অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা বজায় থাকে। বর্ষাকালে এক থেকে দু’বার বীজ পুনরায় রোদে শুকিয়ে নেয়া ভালো।
