পেঁপে চাষ
জাত পরিচিতিঃ
![]() |
| পেঁপে চাষ |
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট “শাহী পেঁপে” (বারি পেঁপে-১) নামে একটি পেঁপের জাত ১৯৯২ সালে উদ্ভাবন করেছে । এছাড়াও ব্লুস্টেম, কাশিমপুরী, যশোরী,রাচি, নউন ইউ, হানি ডিউ, রেড হানি, রেড লেডী উল্লেখযোগ্য ।
বীজ হারঃ
২ মিটার দূরে দূরে সারি করে প্রতি সারিতে ২ মিটার দূরত্বে চারা রোপণ করলে ১ হেক্টর জমিতে ২৫০০ গাছের জন্য ৭৫০০ চারার প্রয়োজন হয় । সদ্য সংগৃহীত বীজ হলে ১৪০-১৬০ গ্রাম বীজ দিয়ে প্রয়োজনীয় চারা তৈরি করা যায় ।
চারা তৈরিঃ
পলিথিনে বীজ থেকে বংশ বিস্তার করা হয়। পলিথিন ব্যাগে চারা তৈরি করলে রোপণের পর চারা দ্রুত বৃদ্ধি পায় । ১৫ × ১০ সেমি আকারের পলিথিন ব্যাগে সমপরিমাণ বালি, মাটি ও জৈব সার মিশিয়ে পলিথিন ভর্তি করে পলিথিনের তলায় ২-৩ টি ছিদ্র করতে হবে। সদ্য সংগৃহীত বীজ হলে ১ টি এবং পুরাতন বীজ হলে ২-৩ টি বীজ প্রতিটি পলিথিনে বপণ করতে হবে। প্রতিটি পলিথিনে ১টি চারা রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হবে। ২০-২৫ দিন বয়সের চারায় ১-২% ইউরিয়া স্প্রে করলে চারার বৃদ্ধি ভাল হয়।
জমি নির্বাচন ও তৈরিঃ
পেঁপে গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না । তাই পেঁপের জন্য নির্বাচিত জমি হতে হবে জলাবদ্ধতামুক্ত এবং সেচ সুবিধাযুক্ত । জমি বার বার চাষ ও মই দিয়ে উত্তম রূপে তৈরি করতে হবে । দ্রুত পানি নিষ্কাশনের সুবিধার্থে বেড পদ্ধতি অবলম্বন করা উত্তম । পাশাপাশি দুটি বেডের মাঝে ৩০ সেমি চওড়া এবং ২০-২৫ সেমি গভীর নালা থাকবে । নালাসহ প্রতিটি বেড ২ মিটার চওড়া এবং জমি অনুযায়ী লম্বা হবে ।
গর্ত তৈরিঃ
চারা রোপণের ১৫-২০ দিন পূর্বে বেডের মাঝ বরাবর ২ মিটার দূরত্বে ৬০× ৬০× ৪৫ সেমি আকারের গর্ত তৈরি করতে হবে।
গর্তে সার প্রয়োগঃ
প্রতিটি গর্তে পচা গোবর সার ১৫ কেজি, ৫০০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম জিপসাম, ২০ গ্রাম জিঙ্ক সালফেট, ২০ গ্রাম বোরিক এসিড মাটির সাথে মিশিয়ে গর্ত পূরণ করে সেচ দিতে হবে।
বীজ বপণ ও চারা রোপণের সময়ঃ
আশ্বিন (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) এবং পৌষ (ডিসেম্বর-জানুয়ারি) মাস পেঁপের বীজ বপণের জন্য উত্তম সময়। বীজ বপণের ৪০-৫০ দিন পর চারা রোপনের উপযোগী হয়।
চারা রোপণঃ
চারা রোপণের পূর্বে গর্তের মাটি উলট-পালট করে নিতে হবে। প্রতিটি গর্তে ৩০ সেমি দূরত্বে ত্রিভুজাকারে তিনটি করে চারা লাগাতে হবে। বীজতলায় উৎপাদিত চারার উম্মুক্ত পাতাসমূহ রোপণের পূর্বে ফেলে দিলে রোপণকৃত চারার মৃত্যুহার কমবে। পলিব্যাগে উৎপাদিত চারার ক্ষেত্রে পলিব্যাগটি খুব সাবধানে অপসারণ করতে হবে যাতে মাটির বলটি ভেঙ্গে না যায় । পড়ন্ত বিকেলে চারা রোপণ করা ভাল। রোপণের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে চারার গোড়া যেন বীজতলা বা পলিব্যাগে মাটির যতটা গভীরে ছিল তার চেয়ে গভীরে না যায় ।
আন্তঃপরিচর্যাঃ
১) গাছে উপরি সার প্রয়োগঃ
ভাল ফলন পেতে হলে পেঁপেতে সময়মত সার প্রয়োগ করতে হবে । উপরি হিসেবে গাছ প্রতি ৪৫০-৫০০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ৪৫০-৫০০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। চারা রোপণের এক মাস পর হতে প্রতি মাসে গাছ প্রতি ইউরিয়া ও পটাশ সার ৫০ গ্রাম হারে প্রয়োগ করতে হবে। গাছে ফুল আসার পর সারের মাত্রা দ্বিগুন করতে হবে। মাটিতে রস না থাকলে পানি সেচের ব্যবস্থা করা আবশ্যক ।
২) আগাছা দমনঃ
পেঁপের জমি সবসময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে। বর্ষা মৌসুমে আগাছা দমন করতে গিয়ে মাটি যেন বেশি আলগা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৩) পানি সেচ ও নিকাশঃ
শুষ্ক মৌসুমে প্রয়োজন অনুযায়ী পানি সেচ দিতে হবে । সেচে ও বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি যাতে জমিতে জমে না থাকে সে জন্য পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকা জরুরী।
৪) অতিরিক্ত গাছ অপসারণঃ
চারা রোপণের ৩-৪ মাস পর গাছে ফুল আসলে প্রতি গর্তে সুস্থ সবল একটি স্ত্রী গাছ রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হবে। তবে সুষ্ঠু পরাগায়ন ও ফল ধারণের জন্য শতকরা ৫ টি পুরুষ গাছ রাখা অপরিহার্য।
৫) ফল পাতলাকরণঃ
বেশিরভাগ জাতের ক্ষেত্রে একটি পত্রকক্ষে একাধিক ফুল আসে এবং অনেক ফল ধরে। ফল কিছুটা বড় হলে প্রতিটি পত্র কক্ষে সবচেয়ে ভাল ফলটি রেখে বাকিগুলো ছিঁড়ে ফেলে দিতে হবে। দ্বিতীয় বা পরবর্তী বছরে প্রচুর পরিমাণে ফল ধরার ফলে সেগুলো খুব ঠাসাঠাসি অবস্থায় থাকে ফলে ঠিক মত বাড়তে পারে না এবং আকৃতি নষ্ট হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ছোট ফলগুলো ছাঁটাই করতে হবে ।
৬) খুঁটি দেওয়াঃ
বেশি ফল ধরলে বা ঝড়ের হাত হতে গাছ কে রক্ষা করতে হলে শক্ত খুঁটি মাটিতে পুঁতে গাছের সঙ্গে বেঁধে দিতে হবে ।
ফসল সংগ্রহ ও পরবর্তী করণীয়
চারা রোপণের ৩ মাসের মধ্যেই ফুল আসতে শুরু করে এবং ফল ধরার ২-৩ মাসের মধ্যেই সবজি হিসাবে পেঁপে সংগ্রহ করা যায় । যখন ফলের কষ হালকা হয়ে আসে এবং জলীয়ভাব ধারন করে এবং ফলের গায়ে যখন হালকা হলুদ রং দেখা দেবে তখন ফল সংগ্রহ করতে হবে । গাছে ৩০-৪০ টি ফল আসার পর আর ফল না ধরতে দিয়ে পরবর্তী ফুলগুলো ভেঙ্গে দিতে হয় । তাহলে শেষ ফলটি ধরার ৬০ দিন পর যদি গাছ থেকে সব ফল সংগ্রহ করা হয় তবে এগুলোর ২/৩ অংশ পাকা ফল হিসেবে বাজারজাত করা যায়। এভাবে ১৪-১৫ মাস পরেই পেঁপে বাগান ভেঙ্গে ফেলা যেতে পারে। ফল হলুদ বর্ণ ধারন করার পর সংগ্রহে বিলম্ব হলে কাক, কোকিল, বুলবুলি পাখি ফল খেয়ে ক্ষতি করতে পারে। ফল সংগ্রহের পর হালকা গরম পানিতে (৫০-৫৫ সেঃ তাপমাত্রায়) ৫-১০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে। অতঃপর ঠান্ডা পানি দ্বারা ধুতে হবে। ফল ছায়ায় শুকিয়ে খবরের কাগজ দ্বারা মুড়িয়ে বাঁশের ঝুড়ি অথবা কাগজের কার্টনে প্যাকিং করতে হবে। এতে ফল পচা রোগ কম হবে এবং পরিবহন কালে ফল কম ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
