ধানের ক্ষতিকর পোকামাকড়
ধানের ক্ষতিকর পোকামাকড়
বাংলাদেশে মোট ফসলী জমির প্রায় ৭৬% জমিতে ধান চাষ করা হয়।এর প্রায় ৭০% জমিতেই আধুনিক জাতের ধান চাষ করা হচ্ছ। বর্তমানে দেশে প্রায় ১০ লক্ষ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের ধান আবাদ করা হচ্ছে। স্থানীয় জাতের তুলনায় এসব জাতে পোকামাকড়ের আক্রমণ বেশি হয়। এসব আধুনিক জাতের ভাল ফলন পাওয়ার জন্য স্থানীয় জাতের তুলনায় বেশি সার ও সেচ দিতে হয়। এজন্য পোকামাকড়ের আক্রমণও বৃদ্ধি পায়। ১৯৮৫ সালে এ দেশে ধান ফসলের জন্য ক্ষতিকর ১৭৫ প্রজাতির পোকাকে শক্ত করা হয় (করিম ১৯৮৫)। পরবর্তীতে২০০৩ সালে ২৬৬টি প্রজাতির পোকাকে ধানের ক্ষতিকর পোকা হিসেবে শনাক্ত করা হয়(ইসলাম ও অন্যান্য ২০০৩)।এর মধ্যে সব পোকা সব মৌসুমে বা সব জায়গার ধান ফসলে ক্ষতি করে না।২০ প্রজাতির পোকাকে ধান ফসলের সাধারণ ও গুরুত্বপূর্ণ ক্ষতিকর পোকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে বাংলাদেশে মাজরা, পামরি, বাদামী গাছ ফড়িং ধানের প্রধান তিনটি ক্ষতিকর পোকা।
সূচিপত্র
১. ধানের পোকামাকড়
১.১ মাজরা পোকা
১.২ নলি মাছি
১.৩ পাতা মাছি
১.৪ পামরী পোকা
১.৫ চুংগী পোকা
১.৬ পাতা মোড়ানো পোকা
১.৭ লেদা পোকা
১.৮ লম্বাশুঁড় উড়চুঙ্গা
১.৯ ঘাস ফড়িং
১.১০ সবুজ শুঁড় লেদা পোকা
১.১১ ঘোড়া পোকা
১.১২ সবুজ পাতা ফড়িং
১.১৩ আঁকাবাঁকা পাতা ফড়িং
১.১৪ থ্রিপস
১.১৫ বাদামী গাছ ফড়িং
১.১৬ সাদা পিঠ গাছ ফড়িং
১.১৭ ছাতরা পোকা
১.১৮ গান্ধি পোকা
১.১৯ শীষকাটা লেদা পোকা
১.২০ উরচুংগা
১.২১ গুদামজাত শস্যের পোকা
১.২১.১ কেড়ি পোকা
১.২১.২ লেসার গ্রেইন বোরার
১.২১.৩ অ্যাঙ্গোময়েস গ্রেইন মথ
১.২১.৪ রেড ফ্লাওয়ার বিট্
মাজরা পোকা
ক্রিসেক রোগের অথবা ইঁদুরের ক্ষতির নমুনার সাথে মাঝে মাঝে মাজরা পোকা দ্বারা সৃষ্ট ক্ষত মরা ডিগ বলে ভুল হতে পারে। মরা ডিগ টান দিলেই সহজে উঠে আসে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত গাছের কান্ডে মাজরা পোকা খাওয়ার দরুণ ছিদ্র এবং খাওয়ার জায়গায় পোকার মল দেখতে পাওয়া যায়।
শীষ আসার পর মাজরা পোকা ক্ষতি করলে সম্পূর্ণ শীষ শুকিয়ে যায়। একে ‘সাদা শীষ’, ‘মরা শীষ’ বা ‘হোয়াইট হেড’ বলে। খরায় বা ইঁদুরের ক্ষতির নমুনা হোয়াইট হেড-এর মত দেখা যেতে পারে। কীড়া যদি পাতার খোলের ভেতরে খায় এবং কান্ডের ভেতরের অংশ সম্পূর্ণভাবে কেটে না দেয় তাহলে ধানগাছের আংশিক ক্ষতি হয় এবং শীষের গোড়ার দিকের কিছু ধান চিটা হয়ে যায়।
মাজরা পোকার আক্রমণ হলে, কান্ডের মধ্যে কীড়া, তার খাওয়ার নিদর্শন ও মল পাওয়া যায়, অথবা কান্ডের বাইরের রং বিবর্ণ হয়ে যায় এবং কীড়া বের হয়ে যাওয়ার ছিদ্র থাকে। গাছে মাজরা পোকার ডিমের গাদা দেখলে বুঝতে হবে গাছের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। হলুদ মাজরা পোকা পাতার ওপরের অংশে ডিম পাড়ে এবং গোলাপী মাজরা পোকা পাতার খোলের ভিতরের দিকে ডিম পাড়ে। হলুদ মাজরা পোকার ডিমের গাদার ওপর হালকা ধূসর রঙের একটা আবরণ থাকে। কালোমাথা মাজরা পোকার ডিমের গাদার ওপর মাছের আঁশের মত একটা সাদা আবরণ থাকে, যা ডিম ফোটার আগে ধীরে ধীরে গাঢ় রং ধারণ করে।
মাজরা পোকার কীড়াগুলো ডিম থেকে ফুটে রেরুবার পর আস্তে আস্তে কান্ডের ভেতরে প্রবেশ করে। কীড়ার প্রথমাবস্থায় এক একটি ধানের গুছির মধ্যে অনেকগুলো করে গোলাপী ও কালোমাথা মাজরার কীড়া জড়ো হতে দেখা যায়। কিন্তু হলুদ মাজরা পোকার কীড়া ও পুত্তলীগুলো কান্ডের মধ্যে যে কোন জায়গায় পাওয়া যেতে পারে।
আলোর চার পাশে যদি প্রচুর মাজরা পোকার মথ দেখতে পাওয়া যায় তাহলে বুঝতে হবে ক্ষেতের মধ্যে মথগুলো ডিম পাড়া শুরু করেছে।
গলমাছি বা নলিমাছি
এ পোকার আক্রামণের ফলে ধান গাছের মাঝখানের পাতাটা পিঁয়াজ পাতার মত নলাকার হয়ে যায়। এ জন্য এ পোকার ক্ষতির নমুনাকে ‘পিঁয়াজ পাতা গল’ বা ‘নল’ বলা হয়ে থাকে। এ গলের বা নলের প্রথমাবস্থায় রং হালকা উজ্জ¦ল সাদা বলে একে ‘সিলভার শুট’ বা ‘রূপালী পাতা’ বলা হয়। পেঁয়াজ পাতা গল বড় বা ছোট হতে পারে। ছোট হলে সনাক্ত করতে অনেক সময় অসুবিধা হয়। গল হলে সে গাছে আর শীষ বের হয় না। তবে গাছে কাইচ থোড় এসে গেলে গলমাছি আর গল সৃষ্টি করতে পারেনা।
গাছের মাঝখানের পাতাটা গল বা পিঁয়াজ পাতার মত হয়ে যায়। তারই গোড়ায় বসে গলমাছির কীড়াগুলো খায়। কীড়াগুলো এই গলের মধ্যেই পুত্তলীতে পরিণত হয় এবং এই গলের একেবারে ওপরে ছিদ্র করে পুত্তলী থেকে পূর্ণ বয়স্ক গলমাছি বেরিয়ে আসে। শুধু পুত্তলীর কোষটা সেখানে লেগে থাকে। পূর্ণ বয়স্ক গলমাছি দেখতে একটা মশার মত। স্ত্রী গলমাছির পেটটা উজ্জল লাল রঙের হয়। এরা রাতে আলোতে আসে, কিন্তু দিনের বেলায় বের হয় না। স্ত্রী গলমাছি সাধারণতঃ পাতার নীচের পাশে ডিম পাড়ে, তবে মাঝে মধ্যে পাতার খোলের উপরও ডিম পাড়ে।
গলমাছির বাৎসরিক বংশবৃদ্ধি মৌসুমী আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে। শুষ্ক মৌসুমে গলমাছি নির্জীব থাকে এবং ঝরা ধান বা ঘাসের মধ্যে পুত্তলী অবস্থায় বেঁচে থাকে। বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই পূর্ণ বয়স্ক গলমাছি তৎপর হয়ে ওঠে এবং ঘাস জাতীয় বিকল্প গাছের খাদ্য খেয়ে এক বা একাধিক বংশ অতিক্রম করে। ঘাস জাতীয় গাছে গলমাছির এক একটি জীবনচক্র সম্পূর্ণ হতে ৯-১৪ দিন এবং ধানের ওপর ৯-২৪ দিন সময় লাগে। ধানের চারা অবস্থা থেকে যদি আক্রমণ শুরু হয় তাহলে কাইচ থোড় অবস্থা আসা পর্যন্ত সময়ে এ পোকা কয়েকবার জীবনচক্র সম্পূর্ণ করতে পারে। যে সমস্ত অঞ্চলে শুধু শুষ্ক ও বর্ষা মৌসুম বিদ্যমান, সে সব অঞ্চলে বর্ষা মৌসুমের আগাম ধান ক্ষতি এড়িয়ে যেতে পারে। বর্ষা মৌসুমের শেষের দিকে রোপণ করলে সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। বর্ষা মৌসুমে বেশী আক্রান্ত হয়ে থাকলে শুষ্ক মৌসুমে সেচের আওতাভুক্ত ধানক্ষেত আক্রান্ত হতে পারে।
পাতামাছি
পূর্ণ বয়স্ক পাতা মাছি ২ মিলিমিটার লম্বা হয়। এরা পাতার উপরে একটা করে ডিম পাড়ে। ডিম ফোটার পর কীড়াগুলো কান্ডের মাঝখানে ঢুকে কান্ডের ভেতরে অবস্থিত কচি মাঝ পাতার পাশ থেকে খেতে শুরু করে। কীড়াগুলো কান্ডের ভেতরে কচি পাতার রঙের মতোই সবুজ মিশ্রিত হলদে রঙের হয়ে থাকে। এরা গাছের বাইরের পাতার খোলে এসে পুত্তলীতে পরিণত হয়। পাতামাছির জীবনচক্র ৪ সপ্তাহে পূর্ণ হয়।
পামরী পোকা
চুংগী পোকা
পূর্ণবয়স্ক চুংগীপোকা ৬ মিলিমিটার লম্বা এবং ছড়ানো অবস্থায় পাখা ১৫ মিমি চওড়া হয়। চুংগীপোকা রাতের বেলায় তৎপর এবং আলোতে আকর্ষিত হয়। গাছের নীচের দিকের পাতার পিছন পিঠে এরা ডিম পাড়ে। কীড়াগুলো বড় চারাগাছ এবং নুতন রোয়া ক্ষেতে বেশী দেখতে পাওয়া যায়। এরা পাতার উপরের দিকটা কেটে চুংগী তৈরী করে এবং এর মধ্যে থাকে। কাটা পাতা দিয়ে তৈরী চুংগীগুলো বাতাসে বা পানিতে ভেসে ক্ষেতের এক পাশে জমা হয় এবং দেখলে মনে হয় যেন কাঁচি দিয়ে পাতাগুলো কুচি করে কেউ কেটে ফেলেছে। চুংগী পোকা প্রায় ৩৫ দিনে এক বার জীবনচক্র সম্পূর্ণ করে।
পাতা মোড়ানো পোকা
পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী পোকা পাতার মধ্য শিরার কাছে ডিম পাড়ে। কীড়াগুলো পাতার সবুজ অংশ খায় এবং বড় হবার সাথে সাথে তারা পাতা লম্বালম্বিভাবে মুড়িয়ে একটা নলের মত করে ফেলে। মোড়ানো পাতার মধ্যেই কীড়াগুলো পুত্তলীতে পরিণত হয়।
লেদা পোকা
লম্বাশুঁড় উরচুংগা
এ পোকার পূর্ণবয়স্ক ও বাচ্চাগুলো ধানের পাতা এমনভাবে খায় যে পাতার কিনারা ও শিরাগুলো শুধু বাকি থাকে। ক্ষতিগ্রস্ত পাতাগুলো জানালার মত ঝাঝরা হয়ে যায়।
ঘাসফড়িং
পূর্ণ বয়স্ক ঘাসফড়িং ও বাচ্চা উভয়ই ধান গাছের ক্ষতি করে থাকে। এরা ধানের পাতার পাশ থেকে শিরা পর্যন্ত খায়। ঘাসফড়িং এর বিভিন্ন প্রজাতি এক সাথে অনেক সংখ্যায় ক্ষেত আক্রমণ করে। তাদেরকে ইংরেজীতে লোকাষ্ট এবং বাংলায় পংগপাল বলা হয়।
সবুজ-শুঁড় লেদা পোকা
পূর্ণবয়স্ক মথ পাতার ওপর ডিম পাড়ে। কীড়াগুলো সবুজ রঙের এবং মাথার উপর এবং লেজের দিকে শিং এর মতো এক জোড়া করে শুড় আছে। শুধুমাত্র কীড়াগুলো ধানের পাতার পাশ থেকে খেয়ে ক্ষতি করে থাকে।
ঘোড়া পোকা সবুজ সেমিলুপার
এ পোকার কীড়াগুলোও সবুজ-শুঁড় লেদা পোকার মত বড় কিন্তু মাথা বা লেজে শিং নেই। কীড়াগুলো ধানের পাতার পাশ থেকে খায়। এরা চারা অবস্থা থেকে কুশী ছাড়ার শেষ অবস্থা পর্যন্ত বেশী ক্ষতি করে থাকে। কীড়াগুলো পিঠ কুচকে চলে।
কীপার পোকা
এ পোকার কীড়াগুলো ধানের পাতার পাশ থেকে খেতে খেতে মধ্য শিরার দিকে আসে (ছবি ৩৩)। সবুজ-শুড় লেদা পোকা, সেমিলুপার এবং এ পোকার খাওয়ার ধরন ও ক্ষতির নমুনা একই রকম।
পূর্ণবয়স্ক কীপার একটি মথ। এর শুঁড় দুটো দেখতে অনেকটা আংটার মত (ছবি ৩৫)। এরা বেশ তাড়াতাড়ি আঁকা-বাঁকা ভাবে ওড়ে। এ পোকার পুত্তলী মোড়ানো পাতার সাথে রেশমী সুতার মত আঠা দিয়ে আটকানো থাকে (ছবি ৩৪)।
সবুজ পাতা ফড়িং
সবুজ পাতা ফড়িং ধান উৎপাদনকারী প্রায় সব দেশেই পাওয়া যায়। পূর্ণবয়স্ক ও বাচ্চা পোকা ধান গাছের পাতা থেকে রস শুষে খায়। এরা বেটে ধান, ক্ষণস্থায়ী হলদে রোগ, টুংরো এবং হলুদ বেটে নামক ভাইরাস রোগ ছড়ায়। সাধারণতঃ টুংরো রোগ বেশি ছড়ায়। পূর্ণবয়স্ক সবুজ পাতা ফড়িং ৩-৫ মিলিমিটার লম্বা এবং গায়ে উজ্জ¦ল সবুজ রঙের সাথে বিভিন্ন কাল দাগ থাকে। এরা পাতার মধ্য শিরায় বা পাতার খোলে ডিম পাড়ে। এদের বাচ্চাগুলো পাঁচ বার খোলস বদলায় এবং এদের গায়ে বিভিন্ন ধরনের দাগ আছে ।
আঁকাবাঁকা পাতা ফড়িং
এরা বেটে গল, টুংরো এবং কমলা পাতা নামক ভাইরাস রোগ ছড়ায় এবং পাতার রস শুষে খায়। পূর্ণবয়স্ক ফড়িং-এর পাখায় আঁকাবাঁকা দাগ আছে। বাচ্চাগুলো হলদে ধূসর রঙের।
থ্রিপ্স
বাংলাদেশে ছয়টি প্রজাতির থ্রিপ্স পোকা ধান গাছ আক্রমণ করে। পূর্ণবয়স্ক থ্রিপ্স পোকা এবং তাদের বাচ্চারা পাতার উপরে ক্ষত সৃষ্টি করে পাতার রস শুষে খায়। ফলে পাতা লম্বালম্বিভাবে মুড়ে যায়। পাতায় খাওয়ার জায়গাটা হলদে থেকে লাল দেখা যায়। থ্রিপ্স পোকা ধানের চারা অবস্থায় এবং কুশী ছাড়া অবস্থায় আক্রমণ করতে পারে। যে সমস্ত জমিতে সব সময় দাঁড়ানো পানি থাকে না, সাধারণতঃ সে সব ক্ষেতে থ্রিপ্স-এর আক্রমণ বেশী হয়।
পূর্ণবয়স্ক থ্রিপ্স পোকা খুবই ছোট, ১-২ মিলিমিটার লম্বা এবং এদের শুড়ে ৫-৮টা ভাগ আছে। এরা পাখা বিশিষ্ট বা পাখা বিহীন হতে পারে। পাখা বিশিষ্ট পোকার পাখাগুলো সরু, পিঠের উপর লম্বালম্বিভাবে বিছানো থাকে এবং পাখার পাশে কাঁটা আছে। ডিম পাড়ার জন্য এী পোকার পেছনে করাতের মত ধারালো একটা অংগ আছে যা দিয়ে এরা পাতার মধ্যে ডিম ঢুকিয়ে দিতে পারে। ডিমগুলো সব একই আকারের, খুবই ছোট, এক মিলিমিটারের চার ভাগের এক ভাগ লম্বা এবং দশ ভাগের এক ভাগ চওড়া। প্রথম অবস্থায় ডিমগুলোর রং স্বচ্ছ থাকে এবং ডিম ফোটার আগে আস্তে আস্তে হলদে হয়ে যায়। ডিম থেকে সদ্য ফোটা বাচ্চাগুলো প্রথমে স্বচ্ছ এবং পরে হলদে রং ধারণ করে। সদ্য ফোটা বাচ্চাগুলো কিছুক্ষণ নিশ্চল থাকে, পরে মাঝখানের কচি পাতা, পাতার খোল এবং নতুন বের হওয়া ধানের শীষ খাওয়া শুরু করে এবং পূর্ণ বয়¯ক পোকায় পরিণত হওয়ার পরও তাদের জীবনকাল সেখানেই কাটায়।
বাদামী গাছফড়িং
সাদা পিঠ গাছ ফড়িং
ছাতরা পোকা
শুকনো আবহাওয়ায় বা খরার সময়ে এবং যে সমস্ত জমিতে বৃষ্টির পানি মোটেই দাঁড়াতে পারে না সে ধরনের অবস্থায় ছাতরা পোকার আক্রমণ বেশী দেখতে পাওয়া যায়। এরা গাছের রস শুষে খাওয়ার ফলে গাছ খাটো হয়ে যায়। আক্রমণ বেশী হলে ধানের শীষ বের হয় না। আক্রান্ত ক্ষেতের গাছগুলো জায়গায় জায়গায় বসে গেছে বলে মনে হয়।
স্ত্রী ছাতরা পোকা খুব ছোট, লালচে সাদা রঙের, নরম দেহবিশিষ্ট, পাখাহীন এবং গায়ে সাদা মোমজাতীয় পদার্থের আবরণ থাকে। এরাই গাছের ক্ষতি করে। এক সাথে অনেকগুলো ছাতরা পোকা গাছের কান্ড ও খোল এবং পাতার খোলের মধ্যবর্তী জায়গায় থাকে। পুরুষ পোকা ¯এী পোকার অনুপাতে সংখ্যায় খুবই কম বলে বিশেষ ক্ষতি করতে পারে না। এদের দু’টো পাখা আছে।
গান্ধি পোকা
শীষকাটা লেদাপোকা
উরচুংগা
উরচুংগা গাছের গোড়া কেটে দেয়, ফলে গাছ মারা যায়। অনেক সময় এদের ক্ষতি মাজরা পোকার ক্ষতির সাথে ভুল হতে পারে। উরচুংগা গাছের নতুন শিকড় এবং মাটির নীচে গাছের গোড়া খেয়ে ফেলে। কিন্তু মাজরা পোকা কান্ডের ভেতরটা খায়। পানি আটকে রাখা যায় না এমন ধান ক্ষেতে উরচুংগা একটা সমস্যা। এ পোকা তখনই আক্রমণ করে যখন ক্ষেতে আর পানি থাকে না, অথবা স্থানে স্থানে যখন পানি কম বেশী হয় এবং মাটি দেখা যায়। ক্ষেত পানি দিয়ে ডুবিয়ে দিলে উরচুংগা আইলে বা উঁচু জায়গায় চলে যায়। সেখানে মাটির নীচে শক্ত স্থানে ডিম পাড়ে।
গুদামজাত শস্যের পোকা
গুদামজাত বিভিন্ন খাদ্যশস্য ও বীজ বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গ দ্বারা আক্রান্ত হয়। ফলে খাদ্য শস্যের ওজন কমে যায়, বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা এবং পুষ্টিমান হ্রাস পায়। এ ছাড়া খাদ্য দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে খাওয়ার অনুপযোগী হয় এবং বাজারমূল্য হ্রাস পায়। প্রায় ৬০ টিরও বেশী পোকা গুদামজাত শস্যে ক্ষতি করে থাকে। কয়েকটি প্রধান অনিষ্টকারী পোকার বিবরণ দেয়া হলো।
কেড়ি পোকা
পূর্ণবয়স্ক ও কীড়া উভয়ই গুদামজাত শস্যের ক্ষতি করে থাকে। এ পোকার সামনের দিকে লম্বা শুঁড় আছে। এই পোকা শস্যদানাতে শুঁড়ের সাহায্যে গর্ত করে ভিতরের শাঁস খায়।
লেসার গ্রেইন বোরার
কীড়া ও পরিণত পোকা উভয়ই গুদামজাত শস্যের ক্ষতি করে থাকে (ছবি ৫৮)। আকারে ছোট, মাথা গোল ও গ্রীবা নিচের দিকে নোয়ানো, তাই উপর থেকে দেখলে চোখে পড়ে না। এ পোকার খুব পেটুক প্রকৃতির এবং শস্যদানার ভিতরের অংশ কুড়ে কুড়ে খেয়ে গুঁড়ো করে ফেলে।
অ্যাঙ্গোময়েস গ্রেইন মথ
শুধুমাত্র কীড়া ক্ষতি করে থাকে। পূর্ণবয়স্ক পোকা ছোট, হালকা খয়েরী রংয়ের এবং সামনের পাখার কয়েকটি দাগ দেখা যায় (ছবি ৫৯)। পিছনের পাখার শীর্ষপ্রান্ত বেশ চোখা। শস্যদানার ভিতর ছিদ্র করে ঢুকে শাঁস (বহফড়ংঢ়বৎস) খেতে থাকে এবং পুত্তলী পর্যন্ত সেখানে থাকে।
রেড ফ্লাউওয়ার বিট্ল
পরিণত পোকা ও কীড়া উভয়ই ক্ষতি করে থাকে। পূর্ণবয়স্ক পোকা আকারে খুবই ছোট এবং লালচে বাদামী রঙের। এ পোকা দানাশস্যের গুঁড়া (আটা, ময়দা, সুজি) এবং ভ্রুণ খেতে বেশী পছন্দ করে। আক্রান্ত খাদ্যসামগ্রী দুর্গন্ধযুক্ত ও খারাপ স্বাদের হয়।
















